হলি আরটিজান ট্র্যাজেডি ও বেগম জিয়ার উপহাস

0
391

 

  • মোহাম্মদ সেতাব উদ্দিন
    ১ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার রাত অনুমান ৯.২০ মিনিটে ঢাকার ২ নম্বর গুলশানস্থ ‘হলি আরটিজান’ রেস্তোরাঁয় এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২ জন পুলিশ অফিসারসহ প্রায় ২২ জন নিহত হন। এদের সকলেই নির্দোষ-নিরাপরাধ এবং বেশিরভাগ বিদেশি। যাদের অনেকেই ব্যবসা উপলক্ষে এদেশে এসেছিলেন।
    আমাদের মেট্রো রেলের কাজে জাপান থেকে প্রাঞ্জল ৩ জন ইঞ্জিনিয়ার এসেছিলে ক’দিন আগে। ইতালির একজন মানবসেবি বেশ ক’বছর ধরে এ দেশের অনগ্রসর মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। সকলেই রাতের খাবার খেতে ওই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন।

ভয়াবহ এবং নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর সমগ্র দেশের মানুষ যখন দুঃখ-বেদনায় কাতর ঠিক তখন এদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী (বিএনপি’র দাবি অনুযায়ী), বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খলেদা জিয়া বললেন- ১. ‘এসব সাজানো নাটক! এসব জঙ্গি আওয়ামী লীগের তৈরি। কিছু লোককে ধরে নিয়ে, বন্দী রেখে যখন দাড়ি-মোচ গজিয়ে যায় তখন তাদের জঙ্গি বলে পুলিশ হত্যা করে।’

পাঠক লক্ষ্য করুন, পরক্ষণেই তিনি বলছেন- ২. ‘দেশে যখন বিচার থাকে না তখন জঙ্গির উত্থান হয়।’ তাহলে কোনটা সত্য? ১. কিছু মানুষ ধরে নিয়ে বন্দি রেখে দাড়ি মোচ গজিয়ে গেলে জঙ্গি বলে হত্যা করা হচ্ছে? নাকি তার ভাষায়-২. দেশে বিচার না থাকার কারণে সত্যি সত্যি জঙ্গিদের উত্থান ঘটেছে? দ্বিচারিতা আর কাকে বলে!
আরও মজার ব্যাপার হলো- তিনি ভাঁড়বেষ্টিত হয়ে এই মিথ্যাচার করছিলেন আর ভাঁড়েরা হাততালি দিচ্ছিল, যেন তিনি খাঁটি বয়ান করছেন। মিথ্যাচার করলেও যে হাততালি পাওয়া যায় তা অতীতেও আমরা দেখেছি।

পাঠক, নিশ্চয়ই আপনারা খালেদা জিয়ার অতীত মিথ্যাচারগুলো ভুলে যাননি? তিনি তো ১৯৯৫ সালে বলেছিলেন- ১. ‘আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে মসজিদে উলু ধ্বনি হবে।’ আর পাহাড়িদের সঙ্গে শান্তি চুক্তির আগে ১৯৯৬ সালে বলেছিলেন- ২. তথাকথিত শান্তি চুক্তি হলে রাঙ্গামাটি থেকে ফেনি পর্যন্ত হিন্দুস্থান হয়ে যাবে।
দেশের মানুষকে বিশেষ করে বিএনপি’র অন্ধ সমর্থকদের জিজ্ঞেস করি আপনারা কি কখনো ১. মসজিদে উলু ধ্বনি শুনেন নাকি? আর আমাদের ২. পাহাড়- বান্দরবন, রাঙ্গামাটি, খালেদা জিয়ার পৈত্রিক বাড়ি ফেনি ভারতের অংশ হয়ে গেছে নাকি?

প্রশ্ন হলো তাহলে কেন তিনি এই মিথ্যাচার করেন? কারণ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ব্যাখ্যা করেছেন। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন- ‘খালেদা জিয়া হলো জঙ্গিদের ইমাম। তার প্রয়াত স্বামী জেনারেল জিয়ার মত তিনিও জঙ্গি লালন করেন। তার স্বামী জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করে প্রথমে স্বাধীনতাবিরোধী, খুনি, লুটেরা, গণধর্ষণকারী পাকিস্তানি হায়েনা বাহিনীর দোসর জামায়াতকে পুনর্বাসন করেন। আর স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসান এবং পরে জাতির পিতার খুনি মেজর ডালিম, বজলুল হুদা, রসিদ, ফারুক, নূর, মসলেউদ্দিনদের দেশে-বিদেশ পুনর্বাসন করেন।’

সত্যিই তো বেগম খালেদা জিয়া তার খুনি স্বামীর পথ ধরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আলবদর বাহিনীর কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামীকে মন্ত্রী করেছিলেন। আলবদর-আলসামস বাহিনীর আরেক নেতা মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী পাকিস্তানি দালাল, গণহত্যাকারী আলী আহসান মুজাহিদীকে মন্ত্রী পদে বসিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে অবনত করেছেন। এমনিভাবে রাজাকার নেতা খুনি, লুটেরা, অগ্নিসংযোগকারী সাঈদী, আব্দুল আলীম, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরিসহ আরও আরও স্বাধীনতাবিরোধীকে খুঁজে এনে এমপি-মন্ত্রী বানিয়েছিলেন।
এরও ব্যাখ্যা দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন- ‘এরা পাকিস্তানের এজেন্ট। আইএসআই এর এজেন্ট। এরা পাকিস্তানকে আজও ভুলতে পারেনি।’

খুবই ভাবনার বিষয়। তাহলে কি জেনারেল জিয়াউর রহমান এদেশে নিষিদ্ধ জামায়াতকে পুনর্বাসন করে জঙ্গিবাদের যে বীজ বপন করে গিয়েছিল সেই বিষবৃক্ষ আজ মহীরুহে পরিণত হয়ে বাংলাদেশকে খাবলে খাবলে খাচ্ছে? তাহলে কি বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল, রিজভীরা, ‘ঠাকুর ঘরে কেরে-আমি কলা খাইনি’ খেলা খেলছে দেশের মানুষের সঙ্গে? তাহলে কি দেশের মানুষ প্রশ্ন করতে পারে না যে, শেখ হাসিনা বারবার আক্রান্ত হন জঙ্গিদের দ্বারা কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া এ যাবত একবারও জঙ্গি আক্রমণের শিকার হননি কেন? তিনি কি পীর না মুর্শিদ, আলেম না ওলামা? শুনেছি শেখ হাসিনা নিজে ইসলামের সকল ফরজ মেনে চলেন। নিয়মিত পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। তাকে দেখেও তাই মনে হয়। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া ইসলামের কোন ফরজ মানেন কি মানেন না তা নিয়ে ঈমানদার মুসলমানদের মনে সন্দেহ আছে। তাকে দেখে, তার সাজপোশাক, বেশভুষা দেখে যে কারো মনে সন্দেহ হতেই পারে। ইসলামের সুনির্দিষ্ট আদেশ-নির্দেশ, পোশাক আশাক, রীতিনীতি এদেশের প্রকৃত মুসলমান যা বিশ্বাস করেন এবং মেনে চলেন তিনি কি তা মেনে চলেন? বেগম সাহেবাকে আপাতদৃষ্টিতে বাকসর্বস্ব মুসলমান বলেই মনে হয়।
আর বাম রাজনীতি থেকে বিএনপি’তে আসা মির্জা ফখরুল কোনদিনই ইসলাম পালন করেননি মানেনওনি যা সকলেরই জানা। তিনি যা করেছেন লোক দেখানো। আর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী সাহেবের কথা নাই বা বললাম।

লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক পরিচালক বাংলাদেশ বেতার।