চেয়ারম্যান সেলিম খানকে ২৬৭ কোটি টাকা জরিমানা

0
227

চাঁদপুর প্রতিনিধি: অবৈধভাবে উত্তোলিত বালুর রয়্যালটি হিসেবে চাঁদপুরের বিতর্কিত চেয়ারম্যান সেলিম খানকে ২৬৮ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমাদানের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বালুখেকো হিসেবে পরিচিত সেলিমকে শুধু চার বছরের জন্য এই বিপুল অর্থ দিতে হবে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে তাঁর কাছ থেকে উপযুক্ত র‌য়্যালটি আদায়ের জন্য এ পদক্ষেপ নেয় চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। এ জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়। সেই কমিটি হিসাব করে দেখেছে, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সেলিম খান ৬৬৮ কোটি ৩৩ লাখের বেশি ঘনফুট বালু উত্তোলন করেছেন; কিন্তু তার রয়্যালটি দেননি। প্রতি ঘনফুট ৪০ পয়সা হিসাবে এ পরিমাণ বালুর রয়্যালটি ২৬৭ কোটি ৩৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এই টাকা অতিসত্বর ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমাদানের নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

সম্প্রতি সেলিম খানকে দেওয়া জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সূত্রে জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের ২০২২ সালের এ-সংক্রান্ত একটি রায়ে সেলিম খানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজের ২১টি মৌজা থেকে উত্তোলিত বালুর রয়্যালটি আদায় করার আদেশ দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের র‌য়্যালটি আদায় করার কথা বলা হয় রায়ে। এ রায়ের পর জেলা প্রশাসনকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক ভূমি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের আগস্টে অনুষ্ঠিত জেলা বালুমহাল কমিটির সভায় ওই সময়ে মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ উত্তোলিত বালুর পরিমাণ এবং এর রয়্যালটি নির্ধারণের জন্য কারিগরি সদস্যদের সমন্বয়ে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। উপকমিটি বিভিন্ন সময়ে সরাসরি এবং অনলাইনে সভায় মিলিত হয়। এ টিমের কারিগরি সদস্যরা বিআইডব্লিউটিএ, আইডব্লিউএম এবং সিইজিআইএসের সার্ভে রিপোর্ট ও স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে উত্তোলিত বালুর পরিমাণ নির্ধারণ করেন।

জেলা প্রশাসক আরও উল্লেখ করেন, মোট উত্তোলিত বালুর পরিমাণ এবং তার ভিত্তিতে রয়্যালটি নির্ধারণ সঠিক ও যুক্তিসংগত হয়েছে বলে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয় উপকমিটির সভায়।

চিঠিতে জেলা প্রশাসক অবিলম্বে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন। অন্যথায় অর্থ আদায়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। তবে এ পত্রের পর ১৫ দিনেও রয়্যালটির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করা হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান।

সেলিম খান চাঁদপুর সদরের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ইউপির সরকারি দলের চেয়ারম্যান। তবে নানা বিতর্কিত কাণ্ডের পর তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

তিনি চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদী থেকে আট বছরে পাঁচ শতাধিক অবৈধ ড্রেজার ও বাল্কহেড দিয়ে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বালু উত্তোলন করেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ওই সময়ে সেলিম খানকে বালু উত্তোলনের অনুমতি প্রদানে স্থানীয় প্রভাবশালী সাংসদের ১৫টি ডিও লেটার প্রদানের ঘটনাও প্রকাশ্যে আসে। তবে উত্তোলিত বালুর কোনো রয়্যালটি দিচ্ছিলেন না তিনি।

এ অবস্থায় জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের নির্দেশে ইলিশ সম্পদ রক্ষা, নদী ভাঙনরোধ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। পরে উচ্চ আদালতও তাঁর বালু উত্তোলন বন্ধ করার নির্দেশ দেন এবং তাঁর কাছ থেকে রয়্যালটি আদায়ের নির্দেশ দেন। গত বছরের আগস্টে সেলিম খানের উত্তোলিত বালুর পাওনা টাকা নির্ধারণ করে তা আদায়ের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। সেই নির্দেশনা অনুসারে চার বছরে উত্তোলিত বালুর রয়্যালটি আদায়ের পদক্ষেপ নেয় জেলা প্রশাসন।

সারাবেলা/সংবাদ/এসএ/সারাদেশ/বাংলাদেশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here