সারাবাংলা ডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এ.এইচ.এম শামসুদ্দিন চৌধুরী রচিত “চীনের উত্থান: উদ্বিগ্ন প্রতিবেশী” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মুহাম্মদ আকরম খাঁ হলে ‘চারদিক’ প্রকাশনার আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি এ.এইচ.এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক রচিত “চীনের উত্থান : উদ্বিগ্ন প্রতিবেশী” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও অভিমত প্রকাশ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও অভিমত প্রকাশ অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র সভাপতি ও লেখক, গবেষক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবীর বলেন, বইটিকে তথ্যের আকর বলতে হবে। কেউ এতটা বিশদভাবে লেখেননি যতটা তিনি লিখেছেন। বইয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে উঠে এসেছে কীভাবে চীনের স্বাধীনতায় ভারত বিশাল অবদান রেখেছে। তখন স্লোগান ছিলো হিন্দি-চীনি ভাই ভাই। সেই সৌহার্দ্য থেকে কীভাবে সংঘাতে পৌঁছল বইয়ে সে বিষয়ে আলোচনা রয়েছে। এখন চীন ও ভারতের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। এদিকে নিজস্ব ভূরাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে চীন কাউকে সাহায্য করেনি। তাই চীন-ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে কিনা সে বিষয়ে ভাবতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘চীনকে কোন লেন্স থেকে দেখবেন সেটা খুব প্রয়োজন। চীনকে একাত্তরের লেন্সে দেখবেন নাকি পঁচাত্তর পরবর্তী লেন্সে দেখবেন নাকি আজকের বাস্তবতায় দেখবেন- এই বিষয়গুলোর একটি তাত্ত্বিক আলোচনা খুব জরুরি। বইটিতে বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। এসময় উদ্বিগ্ন প্রতিবেশি হিসেবে চীনের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্যও বলেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং গণহত্যা জাদুঘর প্রধান ট্রাস্টি লেখক, শিক্ষাবিদ ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, আমরা চীনের প্রতি এত ক্ষিপ্ত। কিন্তু আমেরিকার প্রতি এত ক্ষিপ্ত নই কেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে আমেরিকা আরও বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে। মহাশক্তি হিসেবে আমেরিকা এবং সৌদি আরবও রয়েছে। তারাও অনেক পরে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এর কারণ এ অঞ্চলের মানুষ সমাজতন্ত্র কিংবা ধর্মনিরপেক্ষতা খুব বেশি গ্রহণ করতে পারিনি। এদিকে চীনকে ভয় পাওয়ার কারণ হলো তাদের অর্থনৈতিক আগ্রাসী মনোভাবের জন্য। আমেরিকা এ বিষয়ে নমনীয় হলেও চীন কখনোই নমনীয় হয়নি। মূলকথা হলো যে রাষ্ট্রই বড় হবে সেই রাষ্ট্রই আধিপত্য বিস্তার করবে। তাই শুধু একদিক ভেবে নয় বরং আমাদের স্বার্থ বিবেচনা করে চলতে হবে। আমেরিকা কিংবা চীন সবার সঙ্গেই বন্ধুত্ব রক্ষা করতে হবে।’
“চীনের উত্থান: উদ্বিগ্ন প্রতিবেশী” বইয়ের লেখক সাবেক বিচারপতি এ.এইচ.এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আমার এই বইয়ে ভারতের একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষকের বিষয়ে উল্লেখ আছে, যিনি চীনের ঋণ সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। শ্রীলঙ্কা যেভাবে সর্বস্বান্ত হয়েছে এবং পাকিস্তান যেভাবে সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে, এমনকি পৃথিবীর আরও অনেক দেশের বিষয়েও আলোচনা রয়েছে। অর্থাৎ চীন যেখানেই টাকা দেয় সেখানে জমি দখল করে কিংবা সেখানের সম্পদ দখল করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই চীনের ঋণসহ সকল সম্পর্কের বিষয়ে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে যা এই বইয়ে উল্লেখ করেছি।
বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) এর সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়েরের সঞ্চালনায় চীনের উত্থান : উদ্বিগ্ন প্রতিবেশী” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও অভিমত প্রকাশ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক স্বদেশ রায় প্রমুখ।