রাজস্ব আয়ে মোট ঘাটতি ১৭ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা

0
257

সারাবেলা ডেস্ক: আমদানি-রপ্তানিতে ধীরগতি ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বছরের শুরুতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আয় কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে শুল্ক আহরণে, জানুয়ারি পর্যন্ত যা ১১ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। এছাড়া রাজস্ব আয়ে মোট ঘাটতি ১৭ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আয়ের বিবরণী (সাময়িক) সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক মন্দার পূর্বাভাসের কারণে দেশের অভ্যন্তরে অর্থনীতি কিছুটা শ্লথগতিতে আছে। এসব কারণে কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আয় হচ্ছে না। এনবিআর কর্মকর্তারা যদিও আশা করছেন, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবসা-বাণিজ্য আবারো গতি পাবে। তখন রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে আয়করে, ১১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং মূসকে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। তবে শুল্ক আহরণে ঘাটতি ছিল দশমিক ৫৩ শতাংশ। এছাড়া শুল্ক, মূসক ও আয়কর মিলে জানুয়ারিতে মোট ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ওই মাসে মূসকে সবচেয়ে বেশি ৯ হাজার ৬৮১ কোটি ও আয়করে ৮ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা আয় হয়েছে। এছাড়া আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে শুল্ক আয় হয়েছে ৭ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল শুল্কে ৯ হাজার ৮৭৬ কোটি, মূসকে ১৩ হাজার ৫ কোটি ও আয়করে ৮ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আমদানি ও রফতানি শুল্কে লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১১ হাজার, মূসকে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর ১ লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাস (জুলাই-জানুয়ারি) শেষে রাজস্ব আয়ে এখনো ৫৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে আমদানি ও রফতানি শুল্কে ৫২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, মূসকে ৫১ দশমিক ৩৫ ও আয়করে ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের (২০২১-২২) জানুয়ারির তুলনায় চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

জানুয়ারি পর্যন্ত মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, যেখানে আয় হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূসকে ঘাটতি ২ হাজার ৫৩১ কোটি ও আয়করে ২ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা।

রাজস্ব আয়ের বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আহসান এইচ মনসুর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার প্রধান কারণ ডলার সংকট, আমদানীকৃত কিছু পণ্যে কর অব্যাহিত ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া। এনবিআরের রাজস্ব আয়ে ঘাটতির প্রবণতা এপ্রিল পর্যন্ত চলতে পারে। কারণ এখনো ডলার সংকট রয়েছে। এ রকম চলতে থাকলে আইএমএফের শর্ত পূরণে রাজস্ব বোর্ড ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। এছাড়া আগামী এপ্রিলে আইএমএফের ট্যাক্স এক্সপার্ট দল আসবে দেশে। সে সময় তারা রাজস্ব আয় বাড়াতে করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।’

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণের ফলে আমদানিতে শুল্ক আয় কমেছে। এছাড়া আমদানিকে ব্যবহার করে যেসব পণ্য উৎপাদন হয় সেখান থেকেও রাজস্ব আয়ে প্রভাব পড়ছে। আইএমএফ ট্যাক্স রাজস্বের একটা ফ্লোর ঠিক করে দিয়েছে জুনের জন্য। তার চেয়ে কম আয় হলে আইএমএফ পরবর্তী সময়ে আলোচনা করবে কীভাবে সেটা বাড়ানো যায় তা নিয়ে।’

কোভিড মহামারীর প্রভাব থেকে দেশের অর্থনীতি এখনো পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি। এর মধ্যে আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। এমন সংকটের কারণেই রাজস্ব আহরণ কম হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কর আহরণ বাড়াতে যে ধরনের সংস্কার দরকার তা এখনো করা হয়নি বলে মনে করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। রাজস্ব খাতে কার্যকর সংস্কার ছাড়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রাজস্ব আয়ে রাজস্ব বোর্ড যে লক্ষ্যমাত্রা দেয় সেটা কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করে দেয়া হয় না, এটা অনুমাননির্ভর। যে লক্ষ্যমাত্রা দেয় সে অনুযায়ী যদি রাজস্ব আহরণ করতে চায় তাহলে তাদের লোকবল আরো বাড়াতে হবে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায় থেকে রাজস্ব আয়ের বিষয়ে ভাবতে হবে। অনানুষ্ঠানিক খাতকে ট্যাক্সের আওতায় আনতে হবে। তাহলেই কেবল রাজস্ব আয় বাড়বে।’

আজসারাবেলা/সংবাদ/জাই/অর্থনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here