সারাবেলা রিপোর্ট: প্রযুক্তির উৎকর্ষে মানুষ যেমন নিত্য নতুন সব উদ্ভাবনের সাথে পরিচিত হচ্ছে, ঠিক তেমনি ব্যক্তি জীবনে সেগুলোর প্রভাব ও ব্যপ্তি মানুষের জীবন-যাপনকে বদলে দিচ্ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য সবাই অবিরাম চেষ্টায় লিপ্ত। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম এমন একটি উদ্ভাবন যা মানুষের জীবনে নিয়ে আসছে আমুল পরিবর্তন।
করোনার প্রাদুর্ভাবে শারীরিক উপস্থিতিতে সামাজিক অনুষ্ঠান পালনে অনেক দেশেই বিধিনিষেধ রয়েছে। ফলে চাইলেও অনেক মানুষের সমাগমে অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাচ্ছে না। কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে শারীরিক উপস্থিতিতে না হলেও ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে চলছে নানা আয়োজন। শত শত মানুষ ভিডিও প্ল্যাটফর্মে মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন, সভা করছেন, ক্লাস করছেন- এটা এখন সাধারণ ঘটনা। তবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠান আয়োজনকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে এসেছে মেটা প্ল্যাটফর্ম যাকে বলা হচ্ছে মেটাভার্স।
মেটাভার্স কী?
সাধারণ ভিডিওর চেয়ে মেটাভার্সের বিশেষত্ব হচ্ছে- এখানে অংশগ্রহণকারীরা নিজের ত্রিমাত্রিক অবয়ব (অ্যাভাটার) তৈরি করতে পারেন। মূলত মেটাভার্সকে দেখা হচ্ছে ত্রিমাত্রিক কল্প জগৎ হিসেবে যেখানে ব্যবহারকারী নিজের উপস্থিতির বাস্তব অনুভূতি পাবেন। অংশগ্রহণকারীর হয়ে ওই অ্যাভাটার সশরীরে অনুষ্ঠানে কিংবা মিটিংয়ে অথবা ক্লাসে হাজির হতে পারেন। যার অ্যাভাটার সেই ব্যক্তি ওই অ্যাভাটারের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
মেটাভার্সে বিয়ে
ফেসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গের কল্যাণে মেটাভার্স প্রযুক্তি বিশ্বে খুবই আলোচিত শব্দ। এই মেটাভার্সেই বিয়ের পরিকল্পনা সেরেছেন ভারতীয় দুই তরুণ-তরুণী তাদের বিয়ের ভার্চুয়াল সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করছেন। আলোচিত এই হবু দম্পতি হলেন তামিলনাড়ুর দীনেশ শিবকুমার পদ্মাবতী এবং জনগনন্দিনী রামস্বামী। করোনার কারণে বড় পরিসরে মানুষের উপস্থিতিতে ভারতে অনুষ্ঠান আয়োজন নিষিদ্ধ। কিন্তু এই ভারতীয় তরুণ-তরুণী কয়েক জনের উপস্থিতিতে বিয়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান করতে নারাজ। ফলে তারা বেছে নিয়েছেন মেটাভার্সকে। চেন্নাই থেকে প্রায় ২৭৫ কিলোমিটার দূরে তামিলনাড়ূর কৃষ্ণগিরি জেলার রামস্বামীর গ্রামে স্বল্প পরিসরে আত্মীয়, বন্ধু ও স্বজনদের নিয়ে শারীরিক উপস্থিতিতেই বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। তবে চমকটা থাকবে বিবাহোত্তর সংবর্ধনায়। তাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় দাওয়াত পাচ্ছেন দুই হাজার অতিথি, যে আয়োজনের পুরোটাই হবে মেটাভার্সে। ‘পটারহেডস’ বা হ্যারি পটারের ভক্ত হিসেবে এই জুটি মেটাভার্সে বিশেষ থিমের পার্টি বেছে নিয়েছেন, যেখানে ফোন, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপের মাধ্যমে হাজির হবেন আমন্ত্রিতরা। মেটাভার্সে সংবর্ধনা পার্টির থিম ডিজাইনে দেড় লাখ টাকারও বেশি খরচ করেছেন তারা।
ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠানে নবদম্পতি অতিথিদের স্বাগত জানাবেন। ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের পছন্দে অ্যাভাটার তৈরি থেকে পোশাক নির্বাচন সবটাই করবেন। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠান হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে অভ্যাগতরাও অনায়াসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারবেন। পাশাপাশি রামস্বামীর প্রয়াত বাবার অ্যাভাটারও উপস্থিত থাকবেন এ আয়োজনে।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, পরপারে থেকেও অভ্যাগত অতিথিদের সন্তানের বিয়েতে আশীর্বাদ করতে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন কনে রামস্বামীর প্রয়াত বাবাও। এজন্য তার একটি ত্রিমাত্রিক অবতার তৈরি করেছেন দীনেশ। জানিয়েছেন, ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার সুবাদে গত এক বছর ধরে ইথেরিয়াম মাইনিং করার ফাঁকে মেটাভার্সে বিয়ের আয়োজনের বন্দোবস্ত করেন তিনি। পদ্মাবতী বলেন, ‘গত এপ্রিলে আমার শ্বশুর মারা যান। আমি তার একটি ত্রিমাত্রিক অবতার তৈরি করছি। তিনি আমাদের আশীর্বাদ করবেন।’
আজসারাবেলা/সংবাদ/মৃধা/বিজ্ঞান- প্রযুক্তি