বই পারে বদলে দিতে আপনাকে

0
910
ছবি: সংগৃহীত

সারাবেলা রিপোর্ট: প্রতিটা মানুষের জীবনের সফলতা অর্জনের পেছনে একটা রহস্য থাকে। কেউ যখন সে রহস্য খুঁজতে পারে তখন সফলতার পথ বেছে নিতে সহজ হয়। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার বা সফলতার অন্যতম একটি বিষয় হলো বই পড়া। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন পর্যন্ত বই সবসময় মানুষের এগিয়ে যাওয়ায় সহায়ক ।

সভ্যতার সৃষ্টিলগ্ন থেকে যারা আমাদের কাছে এখনও স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের একটা বড় গুণ ছিল জ্ঞান সাধনা। জ্ঞানের এর প্রতি অসীম তৃষ্ণার মধ্য দিয়ে জীবনের সফলতা খুঁজে পেয়েছেন। মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বড় একটা পার্থক্য হলো ‘সে জানতে চায়’। তার মাঝে একটা জানার কৌতুহল রয়েছে। সে কৌতুহল থেকে যুগে যুগে বিভিন্ন সভ্যতার উত্থান হয়েছে। সে নতুন কিছু শেখার জন্য সবচেয়ে মূল্যবান উৎস হলো বই পড়া।

বই আমাদের মানসিকভাবে প্রশান্তি প্রদান করে। বলা হয়ে থাকে একটি ভালো বই মানুষের মনশ্চক্ষু যেমন খুলে দেয় তেমনি জ্ঞান ও বুদ্ধিকে প্রসারিত ও বিকশিত করে মনের ভিতরে আলো জ্বালাতে সাহায্য করে । বই আমাদের মন-মানসিকতাকে উৎকর্ষিত করে তোলে।

মানসিক সজীবতা

বই পড়ার সর্বপ্রথম উপকারিতা হচ্ছে মানসিক উত্তেজনা হ্রাস করা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, অধ্যয়ন Dementia এবং Alzheimer’s নামের এই রোগ দুটিকে হ্রাস এমনকি প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। মস্তিষ্ককে সচল রাখতে বই অনেকবেশি সহায়তা করে। বই মানুষের মাঝে এক ধরণের সজীবতা তৈরী করতে সহায়তা করে। বই পড়ার ফলে মানুষের মস্তিষ্কে যে উদ্দীপনা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয় তা মানুষের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে । মানুষের শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো মস্তিষ্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ । শরীর সুস্থ রাখতে আমরা যেমন ব্যায়াম করি তেমনি মস্তিষ্ককে সচল ও কর্মচঞ্চল রাখতে বই পড়া বিশেষ জরুরী ।

কিছু মানুষ তাদের মানসিক চাপ কমাতে ব্যায়ামের আশ্রয় নেয়। আবার কেউ কেউ যোগব্যায়ামের মাধ্যমে তাদের মানসিকভাবে স্বস্তি পেতে চায়। বই পড়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূরণ বিষয় হলো এটি খুব স্বল্প সময়ে এক অজানা জগতে নিয়ে যেতে পারে। একটি ভালো অনুচ্ছেদ আপনাকে প্রতিদিনের বাস্তবতা থেকে একটু হলেও রেহাই দেবে। একটি বই ৬ মিনিটের মধ্যে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় নিয়ে যেতে পারে। ফলে কেউ কোনো বই পড়লে বাস্তব অথবা কাল্পনিকভাবে কাহিনীর সাথে নিজেকে মেলানোর চেষ্ঠা করে। এমনিভাবে আপনার মানসিক চাপ কমিয়ে শেষে মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনবে।

নতুন তথ্য-উপাত্ত

বই নতুন নতুন তথ্য জানতে অনেক বেশি সাহায্য করে। যত বেশি বই পড়বেন, তত বেশি নতুন তথ্যের সাথে পরিচয় হওয়ার সুযোগ থাকে। এক সময় লক্ষ্য করবেন আপনার কথাবার্তায় প্রায়ই সেসব তথ্যের ব্যবহার হচ্ছে। এসব নতুন চিন্তা ও তথ্যের সাথে নিজেকে তুলনা করার সুযোগ ঘটবে। নিজেকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা আপনার চাকুরিজীবনে এমনকি ব্যক্তিগত জীবনেও কী পরিমাণ সহায়ক হবে তা অবশ্যই আপনার অজানা নয়।

নতুন ভাষা ও সংস্কৃতির সংশ্লেষ
নতুন ভাষা, সংস্কৃতির সাথে পরিচয়ে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বই আমাদের নিজের সংস্কৃতির সাথে অন্য সংস্কৃতির সাথে তুলনাও করতে সাহায্য করে। তাছাড়া অন্য সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারি আমরা বই পড়ার মধ্য দিয়ে।

স্মৃতিশক্তি উন্নত করে
যত বেশি বই পড়া হবে, ততবেশি স্মরণশক্তি উন্নত হয়। বই পড়তে গিয়ে সেখানের বিভিন্ন তথ্য, চরিত্র, ইতিহাস, পটভূমি, গল্পের উদ্দেশ্য, উপ-খণ্ড ইত্যাদি স্মরণ রাখার একটা প্রচেষ্ঠা থাকে। এভাবে মস্তিষ্কে চর্চার ফলে স্মৃতিতে তথ্যগুলো জমা হতে থাকে। প্রত্যেকটি নতুন স্মৃতি একটি নতুন Synapse তৈরি করে এবং বিদ্যমান স্মৃতিকে আরও শক্তিশালী করে এবং স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিকে আরও উন্নত করে।

অন্যের অভিজ্ঞতা অর্জন
আপনি বইয়ে যা পড়ছেন তা মূলত কারও বিশেষ জ্ঞান কিংবা অভিজ্ঞতা থেকেই লেখা। সেই জ্ঞান আপনার সফলতাকে ত্বরান্বিত করবে একটি বিশেষ লক্ষ্যের দিকে। যেহেতু আপনাকে একটি সঠিক পথ অবলম্বন করার উপদেশ দেয়া হবে এবং ভুলগুলো চিহ্নিত করে দেয়া হবে। বিভিন্ন বইয়ে দেখবেন লেখক তার জীবনের সফলতা এবং ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা করে এবং সেই ব্যর্থতা থেকে উপরে উঠতে থাকে বিভিন্ন উপদেশ দিয়ে থাকে।
আপনি তাঁদের গল্প থেকে জানতে পারবেন কোন পথে গেলে সফলতা নিশ্চিত এবং ভুলের সম্ভাবনাও কমে আসে। জীবন খুবই ছোট এসব ভুলের পুনরাবৃত্তি করা সফলদের একজন হতে চাইলে তাঁদের অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং জেনে নেওয়া যায় ব্যর্থতাকে সফলতায় রূপান্তর করার মন্ত্র ।

সৃজনশীল হতে সাহায্য করে
বই যেন আপনাকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যাবে, আপনাকে দেখাবে কোন কিছুই যেন অসম্ভব নয়। পড়ার মাধ্যমেই দেখবেন আপনার অনেক জানা জিনিস বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আবিষ্কার করতে পারছেন। প্রয়োগের ভিন্নতায় জানবেন কীভাবে জীবনের পরিবর্তন আসে। বই যেন এক বিশাল মাকড়শার জাল, যা সবকিছুকেই এক সূত্রে গেঁথে দেয়, আপনার জানা বিষয়ের সঙ্গে নতুন আবিষ্কৃত বিষয়কে জোড়া লাগিয়ে নতুন এক উত্তর কিংবা সমাধান বের করা যেন বইয়ের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।

মনোযোগ বৃদ্ধি করে
তথ্যপ্রযুক্তির যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে মানুষ যেন প্রযুক্তির গতিই আগে গ্রহণ করেছে। মানুষ এখন যে সমস্যাটির সবচেয়ে বেশি সম্মুখীন হচ্ছে তা হল মনোযোগের অভাব। ৫ মিনিটের বিস্তারে একদিকে যেখানে কোন কাজের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, আরেকদিকে হয়ত ইমেইল চেক করা হচ্ছে, আবার সেই সঙ্গে কারো সাথে হয়ত করা হচ্ছে চ্যাট কিংবা ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্টফোন। এই ধরনের আচরণ কার্যক্ষমতা কমিয়ে বাড়িয়ে দেয় হতাশা।

যখন আমরা একটা গল্প পড়ি তখন আমাদের মনোযোগ শুধুমাত্র সেই গল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে যেন পুরো পৃথিবীটা তখন নিশ্চুপ হয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন যদি বই পড়ার অভ্যাস করা হয় তবে দেখবেন মনোযোগ ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজে যাওয়ার আগে ১৫-২০ মিনিট পড়ার অভ্যাস করুন এবং আপনি খুবই অবাক হবেন যে আপনি আগের চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগী হতে পারছেন।

আত্মসম্মানবোধ গড়ে উঠা
একজন বই পড়ুয়া ও আরেকজন বই না পড়ুয়ার মধ্যে অনেকবেশি পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তার চাহিদা, রুচি, দৃষ্টিভঙ্গির, আচরণ অন্যান্য ব্যক্তির সাথে অনেকবেশি আলাদা। জীবনের চলার পথে সে সবসময় তার আত্মসম্মানবোধটাকে যাচাই-বাছাই করার চেষ্টা করে। নিজেকে সবসময় চিন্তার বোধ তৈরী করতে সদা আগ্রহী থাকে।

বই আমাদের সবার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী হয়ে উঠুক। আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবার, সংস্কৃতি এসব কিছু আমূল পরিবর্তনের জন্য বই ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমরা যতবেশি বই পড়ব ততবেশি সভ্য হবো। পৃথিবীতে বর্তমানে যে দেশগুলো পরিচালনা করছে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের বই পড়ার অভ্যাস। তারা সবসময় বই পড়ার মাধ্যমে নিজের চিন্তা-চেতনাকে উৎকৃষ্ট করতে পেরেছে। নিজস্ব সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে পেরেছে। তাই আমাদের সবার উচিত বই পড়া।

 

আজসারাবেলা/সংবাদ/জাই/ফিচার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here