সারাবেলা রিপোর্ট: যৌনতা বা সেক্স হলো জীবের বংশবিস্তারের প্রথমিক মাধ্যম। যে মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে জীব তার বংশ বৃদ্ধি করে সেটাই সেক্স। কিন্তু সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে যৌনতার উদ্দেশ্য কেবল বংশবিস্তারের মধ্যে সিমাবদ্ধ নেই। সেক্সকে মানুষ আরাম বা বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেই মনে করে। সেক্স বা যৌনতা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো, এবং সার্বজনীন একটি ব্যাপার।
সেক্স নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে গড়ে উঠেছে। রয়েছে আলাদা আলাদা কিছু রীতি। সেসব রীতি কারো কাছে খুবই স্বাভাবিক কোনো ব্যাপার। আবার অনেকের চোখেই রীতিমতো আজব একটি বিষয়।
আজ পড়ুন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সেক্স বিষয়ে কিছু রীতির কথা।
হাওয়াইয়ের আদিবাসীরা তাদের যৌনাঙ্গের আলাদা নাম রাখে। ঐতিহ্যগতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসীরা তাদের গোপন অঙ্গের উপাসনা করে এবং আলাদা একটা ‘আদুরে নাম’ দিয়ে থাকে। কিন্তু সেখানেই তারা থেমে থাকেনি। আদিবাসীদের রাজা থেকে শুরু করে সাধারণ লোক পর্যন্ত অনেকেরই থাকত ‘মেলে মা’ই’ অর্থাৎ নিজস্ব একটা মন্ত্র – যা রচিত বেশ কাব্যিক ভাষায়। হাওয়াইয়ের আদিবাসীরা নিজেদের যৌনাঙ্গের আলাদা নাম দেন। এসব মন্ত্রে বেশ খোলামেলা কাব্যিক ভাষায় বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হতো তাদের গোপন অঙ্গের।
জাপানিদের যৌনমিলনের পরিমাণ আগের চাইতে কমে গেছে। জাপানে এখন জন্মহার ক্রমাগত কমছে। তার সঙ্গে সঙ্গে কমছে কনডম ও জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির ব্যবহার, গর্ভপাতের সংখ্যা, এবং যৌন রোগের প্রকোপ। দেশটির পরিবার পরিকল্পনা সমিতির প্রধান কুনিও কিতামুরা গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা একটাই, আর তা হলো জাপানের লোকেরা আগের চাইতে কম সেক্স করছে’
সাম্প্রতিক এক জরিপে বলা হয়, জাপানের বহু দম্পতি যৌনসম্পর্কবিহীন বিবাহিত জীবন যাপন করছেন। এক-তৃতীয়াংশ পুরুষ বলেছেন, তারা এত ক্লান্ত থাকেন যে এসব করতে ইচ্ছে করে না। এক-চতুর্থাংশ জাপানি নারী বলেছেন, সেক্স তাদের কাছে একটা সমস্যা বলে মনে হয়।
আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, জাপানে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়স্কদের মধ্যে কুমার-কুমারীর সংখ্যা গত এক দশকে অনেক বেড়ে গেছে। প্রায় ৪৫ শতাংশই বলেছেন তারা কখনো যৌনমিলন করেননি।
দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা বাচ্চা চান না। দক্ষিণ কোরিয়ার নারীদের গড়ে ১ দশমিক ০৫টি সন্তান হয়। কিন্তু দেশটির জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে এ সংখ্যা দুই এর ওপর হওয়া দরকার। কিন্তু দেশটিতে বাড়ির উচ্চমূল্য, সন্তান পালনের ব্যয়বাহুল্য, এবং দীর্ঘ কর্মঘণ্টার কারণে চাকরিজীবী নারীরা সন্তান নিতে চান না। দেশটির সরকার বাচ্চা নেওয়ার জন্য তাদের উৎসাহিত করতে কোটি কোটি ডলার খরচ করছেন। কিন্তু তবুও সেখানে জন্মহার বাড়ছে না।
রাশিয়ায় আছে সন্তান উৎপাদনের জন্য বিশেষ দিন। রাশিয়ায় এই দিবসটির নাম গর্ভসঞ্চার দিবস। রাশিয়ার একটি অঞ্চলে ক্রমাগত জনসংখ্যা কমতে থাকে। ফলে জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য এই অভিনব উপায় বের করেছে সরকার।
মস্কোর পূর্বদিকে উলিয়ানভস্কের গভর্নর ১ সেপ্টেম্বরকে গর্ভসঞ্চার দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। দেশটির মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেদিন দম্পতিরা বাড়িতে থাকবে শুধু সন্তান উৎপাদনের জন্য। সেই দিনটি থেকে নয় মাসের মাথায় যে দম্পতির সন্তান হবে, সেই দম্পতিকে উপহার দেয়া হয়। এসব উপহারের মধ্যে থাকে ভিডিও ক্যামেরা, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি।
ব্রাজিলের মেহিনাকু গ্রামে পুরুষরা নারীদের আকৃষ্ট করেন মাছ দিয়ে। মধ্য ব্রাজিলে মেহিনাকু গ্রামে নারীরা তাদের প্রণয়প্রার্থীদের মধ্যে একজনকে বেছে নেবার এক সহজ পন্থা বের করেছেন। একজন নারীর প্রেমপ্রার্থী যদি একাধিক হয়, তাহলে পুরুষদের সেই নারীকে উপহার দিতে হয় একটি মাছ। যার মাছ সবচেয়ে বড়, তিনিই জিতে নেবেন সেই নারীকে।
অস্ট্রিয়ায় গ্রামাঞ্চলে প্রেমপ্রার্থী পুরুষকে দেয়া হয় ‘বগলের গন্ধওয়ালা’ আপেল। গ্রামীণ অস্ট্রিয়াতে মেয়েদের একটা ঐতিহ্যবাহী নাচ আছে। যেখানে মেয়েরা নাচেন তাদের বগলে আপেলের টুকরো নিয়ে। সেই নারী হয়ত নাচের সময় সেখানে উপস্থিত কোনো পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হলেন। তখন তিনি সেই ঘামে-ভেজা আপেলের টুকরো বাড়িয়ে দেবেন তার দিকে। যদি পুরুষটিরও সেই নারীকে ভালো লেগে থাকে, তাহলে তাকে সেই আপেল থেকে এক কামড় খেতে হবে।
নাচের সময় পুরুষকে ফেলে দিতে পারলে নারী বিজয়ী হন। নাচতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেলে আপনার সুনাম বাড়বে না। কিন্তু অন্তত একটি দেশে এজন্য বরং আপনার পুরস্কার মিলে যেতে পারে। দেশটি হলো কলম্বিয়া। কলম্বিয়ার গুয়াজিরো উপজাতির এক ধরণের বিশেষ উৎসব নৃত্য আছে, যেখানে একজন নারী যদি নাচের সময় এজন পুরুষকে উল্টে ফেলে দিতে পারেন – তাহলে তাদের অবশ্যই যৌনমিলন করতে হবে।
ডেনিশরা ছুটির সময় অন্য দেশের লোকদের চাইতে ৪৬ শতাংশ বেশি পরিমাণে যৌনসম্পর্ক করে থাকেন। ভ্রমণ কোম্পানি স্পাইজ ট্রাভেলের এক জরিপের এ তথ্য উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়। ডেনিশ শিশুদের ১০ শতাংশের ক্ষেত্রেই তাদের মায়েদের গর্ভসঞ্চার হয় তখনই – যখন তারা বাড়ির বাইরে কোথাও যান।
সবচেয়ে বেশি ‘যৌন-সক্রিয়’ হলেন গ্রীকরা। কনডম প্রস্তুতকারক ড্যুরেক্সের এক বৈশ্বিক জরিপে বলা হয়, গ্রীসের লোকেরাই সবচেয়ে বেশি বার যৌনমিলন করে থাকেন। পৃথিবীর ২৬টি দেশের ১৬ বছরের বেশি বয়স্ক ৩০ হাজার লোকের ওপর ওই জরিপ চালানো হয়। জরিপে দেখা যায়, গ্রীসের লোকেরা গড়ে প্রতি বছর ১৬৪ বার যৌনমিলন করেন। তবে সবচেয়ে বেশি ‘যৌন-সক্রিয়’ হওয়ার জন্য অন্য কোনো জাতিই তাদের দোষারোপ করছেন না।
আজসারাবেলা/সংবাদ/রই/ফিচার