রাজশাহী প্রতিনিধি : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শক দল আসার একদিন আগে রাজশাহীর শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীরা জানান, শুক্রবার বিকালে এই ঘটনায় পঞ্চম ও ষষ্ঠ ব্যাচের অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তবে শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ তুলেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা না মানায় শাহ্ মখদুম মেডিকেল কলেজে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রী ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গত ২ নভেম্বর শাহ্ মখদুম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব বদরুন নাহার স্বাক্ষরিত পত্রে একই সঙ্গে এই কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধীন অন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
আহত শিক্ষার্থী রায়হান, সুস্মিতা ও জেবা বলেন, শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি টিম শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। এজন্য ভাড়া করে কিছু দামি জিনিসপত্র কলেজে নিয়ে যাওয়া হয় পরিদর্শকদের দেখানোর জন্য।
রায়হান বলেন, এই খবর পেয়ে বিকাল ৫টার দিকে কলেজের শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে সেসব জিনিসের ছবি তুলছিলেন। এই সময় ‘কলেজের বিপক্ষে আন্দোলন করো; আন্দোলন করা দেখাচ্ছি’ বলেই কলেজের কিছু স্টাফসহ বহিরাগত ক্যাডার আমাদের ওপর হামলা করে। তারা আমাদের লাঠি গিয়ে পিটিয়ে জখম করে এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়।
হামলায় বিভিন্ন ব্যাচের অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
চন্দ্রিমা থানার ওসি সিরাজুম মনির বলেন, শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা মিঠু নামের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে এসেছি। ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মেধা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, হামলাটি ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। কোনো কারণ ছাড়াই পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। আমরা এই হামলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে আমরা তীব্র আন্দোলনে যাব।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান স্বাধীন বলেন, দুপক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। তবে এটি শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিত ঘটনা। শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দল আসছে বলেই ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদনহীন এই প্রতিষ্ঠানটিতে কয়েক দফায় ২২৫ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। গত ২ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রাণলয় এক চিঠিতে কলেজটিতে শিক্ষার্থী বন্ধের নির্দেশ দেয়।
এই সিদ্ধান্তকে স্বগত জানিয়ে কলেজের শিক্ষার্থীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের অন্য যেকোনো মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
অপরদিকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রণালয় এই আবেদন গ্রহণ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দল শনিবার কলেজটি পরিদর্শনে আসছে।