- আব্দুল কাদের মহিউদ্দিন:
ডায়াবেটিসকে আমরা “ধনী মানুষের রোগ” বলে থাকি, যার অন্যতম প্রধান কারণ হলো সাধারণ রোগীদের চেয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসা খরচ ১০ গুণ বেশি। আশ্চর্যজনকভাবে এই তথাকথিত ধনী মানুষদের রোগটির ৮০% রোগীই পৃথিবীর নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের দেশগুলোতে বাস করে। ২০১০-২০১১ সময়কালে বাংলাদেশ অষ্টম সর্বোচ্চ ডায়াবেটিক জনসংখ্যার দেশ হিসাবে স্থান পেয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি ১০ জনে ১ জন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যাটি ১ কোটি ৩৭ লাখ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা খরচ ক্রমেই বেড়ে চলেছে ।
বাংলাদেশ ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিক্সের তথ্য অনুসারে, ২০১৩ সালে টাইপ-২ ডায়াবেটিস মেলিটাসের জন্য বাৎসরিক গড় মাথাপিছু ব্যয় ছিল ৮৬৫ ডলার, যা বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপির অর্ধেকের এবং সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) অনুমান করছে যে আগামী ১৫ বছরে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে ৫০% এরও অধিক। আইসিডিডিআর, বি দ্বারা প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১২৯,000 মৃত্যুর কারণ ছিল ডায়াবেটিস । শুধু তাই নয়, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ মহামারীর একটি অন্যতম কো-মরবিড ফ্যাক্টর হলো ডায়াবেটিস । অর্থাৎ ডায়াবেটিস থাকলে কোভিড-১৯ এর ঝুঁকিও বহুগুনে বেড়ে যায়। ওষুধের চিকিত্সা, ভাইরাল প্যাথোজেনেসিস এবং ডায়াবেটিসের সাধারণ বিপাকীয় ব্যাঘাতের বিস্তারিত এখনো গবেষণাধীন পর্যায়ে আছে। তাই করোনা পরিস্থিতিতে ডায়াবেটিস রোগীদের কঠিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে ।
ডাব্লুএইচও-ডায়াবেটিস কান্ট্রি প্রোফাইল ২০১৬ অনুসারে, বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রতি ৪ জনের ১ জন নিষ্ক্রিয় বা অলস জীবন-যাপন করছেন । ২৫-৬৫ বছর বয়সী প্রায় ৮৫% বাংলাদেশী কখনই ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে না। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, শহরে বসবাসকারী যাদের বয়স ১৮ বা তার নিচে এমন প্রতি ১০ জনে ১ জন বাংলাদেশির রক্তে উচ্চ পরিমাণে শর্করার উপস্থিতি পাওয়া যেতে পারে যাকে চিকিৎসার ভাষায় হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলা হয় । এমনকি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলেও ভিন্ন ভিন্ন গবেষণায় অনির্ধারিত ডায়াবেটিস ২০১৬ সালে পাওয়া গিয়েছিল ৭.২% এবং ২০১৯ সালে ১০% । বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলের প্রায় ২০%–৩০% প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে অস্বাভাবিক fasting glucose পর্যালোচনায় বিশেষজ্ঞরা এই উপসংহারে এসেছেন যে ২০৩০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রকোপ গ্রামেই ২৪%-৩৪% এ পৌঁছে যাবে।
অপরদিকে আইডিএফ বলছে, বাংলাদেশে ৭১ লক্ষ মানুষ নিজের অজান্তেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে । ডায়াবেটোলজি & মেটাবলিক সিনড্রোম জার্নালে ২০১৯ সালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দক্ষিণবঙ্গে নারী-পুরুষের উপর করা পৃথক পৃথক গবেষণায় ৭০% এর অধিক মানুষের রক্তে অতিরিক্ত ভাসমান চর্বি (কলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড) পাওয়া যায়। ময়মনসিংহ মেডিকেল জার্নাল, জুলাই ২০১৪ মতে একটি ১৬ বছর-ব্যাপী গবেষণায় পাওয়া গেছে যে ঐসময়কালে বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৮৪০০ স্ট্রোক রোগীর ২৫%ই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। সেই সাথে হাইপারগ্লাইসেমিক রোগীদের হৃদরোগের প্রবণতা অন্য সাধারণ রোগীদের ২ থেকে ৪ গুণ পর্যন্ত বেশি লক্ষ করা যায়। ভেজাল খাবার ও পরিবেশ দূষণ, উভয়ই কমবেশি ডায়াবেটিস রোগের প্রকোপ বাড়ায়।
জার্নাল অফ হেলথ, পপুলেশন এন্ড নিউট্রিশন, সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ইস্যু থেকে জানা যায়, আন্ত-বিভাগীয় জরিপে ঢাকা শহরে ১৯৯৫-২০১১-এর সময়কালে দৈনিক সেবনে প্রাপ্ত খাবারে ৪০%-৫৪% ভেজাল ছিল। বাংলাদেশে প্রায় ৪০০ টন ফরমালিন ভিন্ন কারণে আমদানি হলেও মানুষের পেটে যাচ্ছে, বলছে ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ। বেশ কয়েকটি গবেষণায় ফরমালিন-প্ররোচিত ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এবং ডায়াবেটিস-সম্পর্কিত মনে রাখার সমস্যা (cognitive impairment) তুলে ধরা হয়েছে । আরো দুর্ভাগ্য হ’ল বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজাল দেয়ার ঘৃণ্য প্রবণতা রমজান মাসেই বেশি হয়। এছাড়াও, আর্সেনিক-দূষিত খাদ্যশস্য ও পানীয় গ্রহণ বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের উচ্চ প্রকোপের্ অন্যতম কারণ হতে পারে, এমনটি বলা হয়েছে জার্নাল অফ বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিসিয়ান্স এন্ড সার্জনসে। বাংলাদেশে একটি প্রান্তিক গবেষণায় ৬৪১ জন নারী-পুরুষের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ৫০-১৫০মাইক্রোগ্রাম/লিটার আর্সেনিক-দূষণ, পরিমান-নির্ভর মাত্রায় (dose-dependent manner) মানব-শরীরে হাইপারগ্লাইসেমিয়া ও পক্ষান্তরে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রায় ২২%- ২৭% বাংলাদেশী যুবক কায়িক-পরিশ্রমের অভাব অথবা খাদ্যাভ্যাসের কারণে স্থূলতার বিভিন্ন পর্যায়ে নথিভুক্ত । অপর গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় ৪০% বাংলাদেশী তরুণ ফাস্ট-ফুডগ্রহণ করাকে ওজন বাড়ার কারণ হিসেবে মনে করে।অথচ এই তরুণদের ৩২%ই বিভিন্ন মাত্রায় বাড়তি ওজনের অধিকারী এবং তাদের প্রায় ৫৪% ফাস্ট-ফুডে আসক্ত।
অপরদিকে, একটি সংবাদপত্রের সাক্ষাত্কারে ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক একে আজাদ খান বলেছিলেন, ঢাকা শহরের ৪০% স্কুলগামী শিশু হয় স্থূলকায় অথবা অতিরিক্ত ওজনধারী। “টাইপ-২ ডায়াবেটিসযুক্ত শিশুদের সংখ্যা বাংলাদেশে উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে” -বারডেম হাসপাতালের চেঞ্জিং ডায়াবেটিস ইন চিলড্রেন প্রোগ্রামের বিবৃতিতে বলা হয় “এটা গত পাঁচ বছরে ৩০০% বৃদ্ধি পেয়েছে”। একটি কমিউনিটি লেভেল স্টাডিতে দেখা যায় মাত্র ৩৫% মা শিশু বয়সের স্থূলতাকে ক্ষতির কারণ হিসাবে উপলব্ধি করতে পারেন এবং প্রায় ৭০% মায়ের এর স্বাস্থ্য পরিণতি সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৯৭.৪% শিক্ষার্থী মনো-সোডিয়াম গ্লুটামেটযুক্ত ফাস্টফুড গ্রহণ করে যা স্থূলতা এবং দেহের অন্যান্য অসুবিধার কারণ হয়।
ঢাকার ৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক গবেষণায় দেখা যায়, ৯৮% শিক্ষার্থীই অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জেনেও ফাস্ট-ফুডে গভীরভাবে আসক্ত। যাইহোক, বাংলাদেশে গ্রামীণ অধিবাসীদের তুলনায় শহরে বসবাসকারীদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার প্রবণতা বেশি। শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে পুরুষদের তুলনায় বাংলাদেশি মহিলাদের স্বাস্থ্য-ঝুঁকি বেশি। বাংলাদেশী মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিসের দুটি বড় কারণ হ’ল কার্বোহাইড্রেট নির্ভর খাদ্যের প্যাটার্ন এবং কর্মবিমুখ জীবনধারা। গবেষণায় দেখা যায় যে গত এক দশকে ২৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়স্ক বাংলাদেশীদের মধ্যে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ৩৫%-৩৮% পর্যন্ত বেড়েছে।
সিএনএন হেলথের নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক একটি গবেষণা বলছে, “শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই পরিবেশগত তাপমাত্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি প্রতি বছর ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষের ডায়াবেটিসে আক্রান্তের কারণ হতে পারে”। অনুরূপ সমীক্ষা বলছে যে বর্তমান শতাব্দী শেষ হবার আগেই বাংলাদেশে গড় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ, বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের পরিবেশগত ঝুঁকিও নেহায়েত কম নয় । আবার, ১৫% অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের মাঝে প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস পরিলক্ষিত হয় এবং বাংলাদেশে ৬০% মহিলার ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস ১০ বছরের মধ্যে স্থায়ী ডায়াবেটিসে এ পরিণত হয় বলেছেন ডাঃ সামসাদ জাহান (প্রফেসর অফ অবস্টেট্রিক্স এন্ড গাইনোকোলোজি, বারডেম)। বিবিসির একটি ২০১৮ রেকর্ড অনুযায়ী, বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশে ইনসুলিনের সরবরাহ ঘাটতি পাওয়া গেছে।
এছাড়াও, ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা এবং ডাক্তারদের মধ্যে বিশাল ব্যবধান সুপরিচিত। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) রেকর্ডে দেখা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির কারণে অন্ধত্ব রোধে বাংলাদেশে কোনও তৃতীয় সুবিধা নেই। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুরা এখনও বারডেম এবং ঢাকা শিশু হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানে বেশিরভাগ সময়ই নির্ধারিত চাইল্ড ডায়াবেটোলজিস্টদের পরিষেবা পাচ্ছে না।
ডায়াবেটিস মেলিটাসযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে হতাশা (depression) সাধারণের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি থাকে, যা বাংলাদেশে ৩০%, বলছে ডব্লুএইচও। হতাশা, দুশ্চিন্তা, দাম্পত্য-কলহ কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কের ধরণ ডায়াবেটিস-সংক্রান্ত শারীরিক অবস্থায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সংসার জীবনে অশান্তি যেমন স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের জন্য দায়ী তেমনি স্বামী-স্ত্রীর যেকোনো একজনের অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন পদ্ধতি ডায়াবেটিসের কারণ হয়ে থাকলে তা অপরজনকেও বেপকভাবে প্রভাবিত করে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতে দীর্ঘ-স্থবিরতা আর দ্রুত ধেয়ে আসা অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেড়ে ওঠা মানসিক অশান্তি সাধারণ মানুষের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি যে বাড়িয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উচ্চ মাত্রায় ডায়াবেটিস এবং মধ্যবর্তী হাইপারগ্লাইসেমিয়া থাকা সত্ত্বেও সচেতনতা এবং অবস্থার নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশে এখনো কম। বাংলাদেশের শহুরে জনসংখ্যার এক আন্ত-বিভাগীয় সমীক্ষায় দেখা যায়, ডায়াবেটিস রোগীদের অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য-জ্ঞান (low health literacy) ৬০% এরও বেশি এবং প্রায় ৯০% এর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণও ছিল অপর্যাপ্ত ।
এছাড়াও, অন্য একটি গবেষণা বলছে যে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ডায়াবেটিস-সম্পর্কিত স্বাস্থ্য-জ্ঞান ডায়াবেটিক-রেটিনোপ্যাথির অপর্যাপ্ত স্ক্রিনিংয়ের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটি’ একদল গবেষকের রিপোর্টে পাওয়া যায় বাংলাদেশে ৫৫ বছরের উর্ধে ডায়াবেটিস রোগীদের প্রায় ৩৫% এরই কিডনি এবং ২৫% এর চোখের কর্নিয়ার সমস্যা বা রেটিনোপ্যাথি আছে, যা দীর্ঘস্থায়ী ডায়াবেটিসের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
আইডিএফ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রতি ১০,০০০ শিশুর মাঝে ৪ জনের অধিক টাইপ-১ ডায়াবেটিস শিশু রোগী যোগ হয় । টাইপ -১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলি অনেক । তাদের মাঝে বেশির ভাগই দরিদ্র পরিবারের এবং তাদের শিক্ষার সুযোগও সীমিত । এই শিশুদের প্রায়শই পরিবারের বোঝা হিসেবে গণ্য করা হয় এবং ভগ্ন-স্বাস্থ্যেরঅধিকারী হওয়ায় ভবিষ্যতে চাকরি/বিয়ের সুযোগও থাকে খুব কম । অন্যদিকে, বাল্যবিবাহ এখনো বাংলাদেশে একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা, ১৯২৯ সাল থেকে অবৈধ হলেও তা এখনও বিরাজ করছে । বাল্য বিবাহ, স্বল্প-জন্ম-ওজন (low-birth-weight), পূর্ণ -গর্ভকালব্যাপী ও দুগ্ধদানকারী মায়ের যথাযথ পুষ্টি এবং ডায়াবেটিস একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ডব্লুএইচও’র ২০১৮তে দেয়া এক বিবৃতিতে জানা গেছে ধূমপান বাংলাদেশে প্রতি ৫ জনে ১ জনের মৃত্যুর জন্য দায়ী । ধূমপান শুধু ডায়াবেটিস এর প্রকোপ বাড়ায় না, স্থায়ী ডায়াবেটিসের কারণে হওয়া অঙ্গহানির (diabetes foot amputation) জন্যও ধুমপান অনেকাংশে দায়ী । এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের যক্ষ্মা জনস্বাস্থ্যের এক নিঃশব্দ উদ্বেগ হিসাবে দেখা দিয়েছে।
২০১৮ সালে টেলিনর-হেলথ এবং বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস) ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জটিলতার ঝুঁকি কমাতে প্রথমবারের মতো ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্ট পরিষেবা, Dia360 চালু করেছে। রেজিস্টার্ড রোগীরা বাডাস এর ৩টি কেন্দ্র থেকে ডায়াবেটিস পরিষেবা পেতে পারে- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ হেলথ এন্ড সাইন্সেস, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল হেলথ নেটওয়ার্ক (প্রাক্তন ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক নেটওয়ার্ক)। বর্তমানে বাডাস এর রেকর্ডে ৫০ লাখেরও বেশি রেজিস্টার্ড ডায়াবেটিস রোগী আছেন (সমকাল, ১৪ নভেম্বর ২০১৯) । শুধু ডায়াবেটিসের প্রকোপ কমিয়ে স্বাস্থ্য খাতে ১১ শতাংশ ব্যয় কমানো সম্ভব । তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রোগী-শিক্ষা (patient education) এবং চিকিত্সা-ব্যবস্থার সুষ্ঠু প্রতিপালন (treatment compliance), যা আধুনিক বিশ্বে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। ধনী কিংবা দরিদ্র, বিশেষ-ব্যক্তি অথবা সুবিধা-বঞ্চিত, সমস্ত জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য-অভিযান ও রোগী-শিক্ষার মাধ্যমে বাধ্য-বাধকতার আওতায় আনতে হবে। সরকার, বিশেষ সুবিধা-গ্রহনকারী এনজিও এবং ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানি-সহ সকলেরই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
লেখক: সেক্রেটারি এন্ড ট্রেজারার, ডক্টর এম. নাসিরুল্লাহ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, তেজগাঁও, ঢাকা।
E-Mail: trymohi@gmail.com
আজসারাবেলা/সংবাদ/রই/স্বাস্থ্য/ফিচার